পরামর্শ

পয়লা বৈশাখে যেসব খাবার খাবেন

Looks like you've blocked notifications!
ছবি : সংগৃহীত

একবিংশ শতাব্দীতে এসেও বদলায়নি বাঙালির অভ্যাস, আচার-অনুষ্ঠান। প্রত্যেক বাঙালির কাছে ভীষণই স্পেশাল একটি দিন হচ্ছে পয়লা বৈশাখ। দিনটিতে নববর্ষের আনন্দে মেতে ওঠেন সবাই। লাল-সাদা শাড়ি, লাল চুড়ি আর টিপ, সাজসজ্জার পাশাপাশি চলে খাবারের আয়োজন। পান্তা-ইলিশ বৈশাখের একটি ঐতিহ্যময় খাবার। তবে পান্তা-ইলিশ ছাড়া নববর্ষের আনন্দ উপভোগের জন্য রয়েছে আরো নানা ধরনের বাঙালি খাবার। বৈশাখে সঠিক খাদ্য গ্রহণ সব সময় কাম্য। পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরীর মতে, জেনে নিন পয়লা বৈশাখে কী কী খাওয়া-দাওয়া করা উচিত।

শর্করা

বৈশাখে সবার প্রিয় খাবারের মধ্যে একটি হলো পান্তাভাত। এটি শর্করার খুবই ভালো উৎস। পান্তাভাতে প্রচুর ক্যালরি রয়েছে। থায়ামিন ভিটামিন ছাড়াও কিছু ভিটামিন পান্তাভাত থেকে পাওয়া যায়। পান্তাভাত ওজন বাড়াতে অনেক সাহায্য করে। যাঁদের ওজন বেশি, তাঁরা অবশ্যই অল্প পান্তাভাত খেতে পারেন শুধু বৈশাখে। ডায়াবেটিস রোগীদের পান্তাভাত না খাওয়াই ভালো। তবে ইনসুলিন নিলে অল্প পরিমাণ খেতে পারবেন। খাওয়ার পর একটু হাঁটাহাঁটি করলে ভালো।

পান্তাভাত খেতে অনেক লবণের প্রয়োজন হয়। তাই যাঁদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, তাঁদের না খেলেই ভালো। পান্তা ছাড়াও বৈশাখে শর্করাজাতীয় খাবারের মধ্যে রয়েছে চিড়া, খই, মুড়ি ও খিচুড়ি। নরম চিড়া, দই ও কলা দিয়ে খেলে খুবই ভালো। চিড়া সহজেই হজম হয়। মুড়ি-গুড় দিয়ে খাওয়া যেতে পারে। মুড়ির মোয়াও পয়লা বৈশাখের একটি ঐতিহ্যময় খাবার। মোয়ায় ক্যালরি অনেক বেশি, তাই পরিমাণ বুঝে খেতে হবে। খই দুধ দিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এটি আমাদের দেশের একটি স্বাস্থ্যকর শর্করাজাতীয় খাবার। খইতে লবণের পরিমাণ মুড়ির চেয়ে কম থাকে। খইয়ে ভালোমাত্রার খাদ্য আঁশ রয়েছে।

প্রোটিন

সারা বছর কেউ মাছ না খেলে বৈশাখে অনেককেই মাছ খেতে দেখা যায়। বৈশাখে অন্যতম প্রোটিন ঐতিহ্য হিসেবে অনেকে ইলিশ খেয়ে থাকে। ইলিশ মাছ স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এতে বিদ্যমান প্রোটিন ও ফ্যাট শরীরের নানা কাজে আসে। তবে এ সময় ইলিশ মাছ না খেয়ে অন্যান্য যেকোনো মিঠাপানির মাছ খাওয়া যেতে পারে। তবে ডুবো তেলে কড়া ভাজা মাছ স্বাস্থ্যের উপকারের চেয়ে অপকার বেশি করে। ভাজা মাছের পরিবর্তে সরিষা মাছ, মাছের ঝোল, মাছের ভর্তা, মাছের চরচরি খাওয়া যেতে পারে। কাঁচা আম, আনারস, পটোল, ডাঁটা ইত্যাদি দিয়ে মাছ রান্না করলে তা সুস্বাদুও হয়। বাঙালি রান্নার বৈশাখের সঙ্গে মানিয়ে রান্না করলে তা ঐতিহ্য রক্ষায়ও সাহায্য করে। মাছ ছাড়াও বৈশাখের একটি অন্যতম প্রোটিন খাবার হলো ডাল। আম ডাল, সজনে ডাল, ডাল চরচরি, ডাল ভুনা, পাতলা ডাল বৈশাখের অন্যতম খাবার। মাংসের মধ্যে অনেকেই কষানো মাংস, কাঁঠাল মাংস খেয়ে থাকেন। মাংসের প্রোটিনও শারীরিক কাজে আসে। তবে যেকোনো মাছ হলো বৈশাখের সেরা প্রোটিন। দই ও দুধভাত অনেকেরই প্রিয় খাবার। দুধ ও দইজাতীয় প্রোটিনের মধ্যে ক্যালসিয়াম ছাড়াও আরো নানা ভিটামিন ও মিনারেল পাওয়া যায়।

চর্বি

বৈশাখে আয়োজন করে চর্বিযুক্ত খাবার না হলেও রান্নায় তেল ও ঘি ব্যবহারের ওপর চর্বি গ্রহণের মাত্রা নির্ভর করে। দেশীয় রান্না বৈশাখের ঐতিহ্য, তাই সঠিক তেল ব্যবহার করে রান্না করলে চর্বি গ্রহণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। অন্যান্য উপলক্ষের তুলনায় বৈশাখে চর্বিযুক্ত খাবার কমই খাওয়া হয়। কেননা, এই দিনটিতে কেউই তেমন ফাস্টফুড খায় না। এ ছাড়া মোগলাই খাবারও অনেক এড়িয়ে যায়। তাই চর্বি খুব বেশি খাওয়া পড়ে না।

তরল

বৈশাখের তরলের মধ্যে নানা জাতীয় তরল সবাই পান করে থাকে। কাঁচা আমের জুস, মাঠা, লাচ্ছি, বাঙ্গির শরবত, তরমুজের জুস বৈশাখের অন্যতম তরল। এই জাতীয় তরল দেহের তরলের চাহিদা মেটায়। পাশাপাশি ইলেকট্রোলাইটিসের ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে। কাঁচা আমের জুস ত্বককে সূর্যরশ্মির হাত থেকে রক্ষা করে। তরমুজের জুস ত্বক সুরক্ষায় সাহায্য করে। রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা বজায় রাখে। দইয়ের লাচ্ছি বা মাঠা তরলের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি শরীরের ক্যালসিয়ামের চাহিদা মেটাতে সাহায্য করে।

বৈশাখের মিষ্টান্ন

মিষ্টি খাবার থেকে যেকোনো উৎসবের ঐতিহ্য। বৈশাখেও নানা রকম মিষ্টি খাবার খাওয়া হয়। সেমাই, গুড়ের পায়েস, দই, ছানা, মণ্ডা, রসগোল্লা ইত্যাদি বৈশাখের মিষ্টান্ন। অনেকে হালুয়াও তৈরি করে বৈশাখে। তবে হালুয়াতে তেল ও ঘিয়ের ব্যবহার বেশি বলে এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।

বৈশাখের সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর মিষ্টান্ন হলো মৌসুমি রসালো ফল তরমুজ, বাঙ্গি, আনারস ইত্যাদি। ফল ডেজার্ট হিসেবে অনেক স্বাস্থ্যসম্মত। ফল খেলে বাড়তি ক্যালরির ভয় থাকে না। 

ফল প্রচুর ভিটামিন ও মিনারেলও দেয়। তাই ডেজার্ট হিসেবে ফল বা ফলের সালাদের জুড়ি নেই। দইও অনেক উপকারী। মিষ্টান্ন, যা খাদ্যকে হজমে সাহায্য করে। বিশেষ করে টক দইতে ক্যালরি কম, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। দুধের তৈরি যেকোনো ডেজার্টই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। যেমন : ক্ষির, পায়েস, সেমাই, সাগু পায়েস, গুড় পায়েস ইত্যাদি।