২৯ অক্টোবর বাসে আগুন দিয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩ : সিটিটিসি

Looks like you've blocked notifications!
২৯ অক্টোবর বাসে আগুন দিয়ে হত্যার ঘটনায় সিটিটিসির অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া তিন আসামি। ছবি : সিটিটিসি

রাজধানীর পল্টনে গত বছরের ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের দিন বিভিন্ন এলাকায় বাস, ট্রাকসহ কয়েকটি স্থাপনায় আগুন লাগানো হয়। সেদিন ভোরে ডেমরা এলাকায় অছিম পরিবহণের একটি বাসে আগুন দিলে প্রাণ যায় এক শ্রমিকের। এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ছাত্রদল ও যুবদল নেতাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের (সিটিটিসি) স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপ বিভাগের অ্যান্টি ইলিগ্যাল আর্মস অ্যান্ড ক্যানাইন টিম। 

আজ শনিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসির অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান এ তথ্য জানান।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন—ছাত্রদলনেতা নুরুল ইসলাম মনির ওরফে মনির মুন্সি, নারায়ণগঞ্জের যুবদলনেতা সাহেদ আহমেদ ও বিএনপির কর্মী মাহাবুবুর রহমান সোহাগ। সোহাগ হলেন মনির মুন্সির ব্যক্তিগত গাড়িচালক। অভিযানে গাড়িতে আগুন দেওয়ার কাজে ব্যবহৃত প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলও জব্দ করা হয়েছে।

মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ বানচালের উদ্দেশ্যে রাজধানীর পল্টন এলাকায় নারকীয় তাণ্ডব চালায় বিএনপির নেতাকর্মীরা। তারা ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশের নামে রমনায় প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করার মতো জঘন্য কাজসহ অসংখ্য গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায়। এরই ধারাবাহিকতায় ২৯ অক্টোবর ভোরবেলায় ডেমরা থানার দেইল্লা বাসস্ট্যান্ডে পার্কিং করে রাখা অছিম পরিবহণের একটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এতে ওই বাসে ঘুমিয়ে থাকা হেল্পার মো. নাইম ঘটনাস্থলে আগুনে পুড়ে মারা যান এবং অপর হেলপার মো. রবিউল আগুনে মারাত্মক আহত হন। এই ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত ও মামলার তদন্ত শুরু করে সিটিটিসি।

সংস্থাটির প্রধান বলেন, নিহত নাঈমের গ্রামের বাড়ি বরিশালের কোতোয়ালি থানা এলাকায়। নিহত নাইমের বাবার নাম আলম চৌকিদার এবং মায়ের নাম পারভীন বেগম। তারা ডেমরা এলাকাতেই থাকতেন। অভাবের সংসারে একটু সচ্ছলতা ফেরানোর জন্যই অল্পবয়সে কাজে নামেন নাঈম। দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই বাসের ভেতর ঘুমন্ত অবস্থায় নিজের জীবন বিসর্জন দেন তিনি। অপর ভিকটিমের নাম মো. রবিউল। একই বাসে নাঈমের সঙ্গে ঘুমিয়ে ছিলেন রবিউল। ঘুমের মধ্যে আচমকা আগুনের তাপে ঘুম ভেঙে যায় রবিউলের। কিন্তু ততক্ষণে রবিউলের শরীরেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে। কোনোমতে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় গাড়ি থেকে বের হয়ে আসে। পরবর্তীতে পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন।

মো. আসাদুজ্জামান বলেন, তদন্তভার গ্রহণের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে চারপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। ফুটেজ বিশ্লেষণ করে একটি হ্যারিয়ার গাড়ি শনাক্ত করা হয়। যা ওইদিন অগ্নিসংযোগে ব্যবহৃত হয়েছিল। এই গাড়ির সূত্র ধরে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মূল অগ্নিসংযোগকারী ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তার এবং ঘটনায় ব্যবহৃত গাড়িটি জব্দ করা হয়।

আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে আসাদুজ্জামান আরও বলেন, ২৮ অক্টোবরের নাশকতা ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার জন্য মনির মুন্সিকে নির্দেশনা দেয় দলের হাইকমান্ড। নাশকতার মাত্রা আরও বাড়ানো এবং এমন কোনো ঘটনা ঘটানো যাতে করে জনমনে ব্যাপক আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। তারই অংশ হিসেবে বেশ কয়েকজনকে অগ্নিসংযোগের জন্য নিয়োগ দেয় মনির। নিজে বড় একটি ঘটনা ঘটানোর জন্য নারায়ণগঞ্জ যুবদলের সদস্য সচিব এবং তার বন্ধু সাহেদ আহমেদকে ডেকে নেয়। তারা দুজনে মিলে একটি পরিকল্পনা করে যেখানে তারা স্থির করে এমন একটি ঘটনা ঘটাবে যাতে জনমনে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এই পরিকল্পনারই অংশ হিসেবে ডেমরা এলাকার দেইল্লা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রাত ২টার পর বেশ কয়েকবার গাড়ি দিয়ে ঘুরে ঘুরে রেকি করে এবং দেখতে থাকে কোন জায়গাটা সিসিটিভি ক্যামেরার আওতামুক্ত। অবশেষে তারা কাঙ্ক্ষিত টার্গেট ফিক্স করে বড়ভাঙ্গা মার্কেটে চলে যায়। সেখান থেকে তারা দুই লিটারের পানির বোতলে পেট্রোল সংগ্রহ করে রাত তিনটার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। নিরাপদ দূরত্বে গাড়ি থামিয়ে চালক মাহাবুবুর রহমান সোহাগকে গাড়িতে রেখে মনির মুন্সি ও সাহেদ পেট্রোলের বোতল নিয়ে রাস্তার পাশে পার্ক করে রাখা অছিম পরিবহণের গাড়ির কাছে যায়।

মো. আসাদুজ্জামান আরও বলেন, সেখানে একটি গাড়ির ড্রাইভার সিটের পাশে থাকা খোলা গ্লাসের অংশ দিয়ে ড্রাইভার সিটে মনির মুন্সি পেট্রোল ঢেলে দেয় এবং একপর্যায়ে বোতলটি ও সেখানে ফেলে দেয়। তারপর দিয়াশলাই দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। নিমিষেই আগুন ছড়িয়ে পড়লে তারা দুজন দৌড়ে পুনরায় গাড়িতে এসে ওঠে এবং দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। তারা এক্ষেত্রে সম্ভাব্য বিপদ এড়ানোর জন্য উল্টো সাইডে ডেমরা এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে সুফিয়া কামাল ব্রিজ দিয়ে ভুলতায় থাকা মনির মুন্সিদের মালিকানাধীন মুন্সি পেট্রোল পাম্পে রাতযাপন করে। সকাল ১০টায় বাসায় ফিরে যায়।

নাশকতার নির্দেশদাতাদের পরিচয় জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা সবার নাম পরিচয় পেয়েছি। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই প্রকাশ করা যাচ্ছে না। তাদের গ্রেপ্তার শেষে সবাইকে জানানো হবে।